কম্পিউটার প্রসেসর কোর কী? প্রসেসর কোরগুলোর মাঝে মৌলিক পার্থক্য, ক্লক স্পিডের সাথে তাদের তুলনা এবং হাইপার থ্রেডিং টেকনোলজি!

————————–— بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ————————–—
সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি কম্পিউটার প্রসেসর কোর, তাদের প্রকারভেদ, এগুলোর তুলনা, প্রসেসর কোর ও ক্লক স্পিডের পার্থক্য এবং হাইপার থ্রেডিং টেকনোলজি সম্পর্কিত আমার আজকের টিউন।
 ➡ কম্পিউটার ক্রয় করার আগে এবং ক্রয় করার সময়ে আমরা কম্পিউটারের যে জিনিসটার প্রতি বেশি নজর দেই সেটা হলো প্রসেসর এর কোর। বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের পরিপূর্ণ ধারনা থাক বা না থাক কোর বিষয়ে আমাদের আগ্রহটা ঠিকই আছে। তাই ডুয়েল কোর, কোয়াড কোর, হেক্সা কোর কিংবা অক্টাকোর নাম শুনলেই সর্বোচ্চটা কেনার জন্য আমরা অজ্ঞান হয়ে যাই। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু কিংবা আসলে এইসব কোরগুলোর মাঝে মৌলিক পার্থক্য কতোটুকু এই ভাবনাটা আমাদের মাথায় আসে না। কম্পিউটার ব্যবহারকে আরামদায়ক করতে আমাদের কোর বিষয়ে সব চেয়ে বেশি ধারনা রাখা উচিত। আজকের টিউনে আমরা জানার চেষ্টা করবো কম্পিউটার কোর আসলে কী, এটি কী ধরনের কাজ করে, কোরগুলোর মাঝে মৌলিক পার্থক্য কী, প্রসেসর কোর এবং ক্লক স্পীডের মাঝে তুলনা এবং কোর জগতে হাইপার থ্রেডিং টেকনোলজির ভূমিকা। আশা করি শেষ পর্যন্ত পাশে থেকে আমার স্বল্প জ্ঞানের সর্বোচ্চ চেষ্টায় পূর্ণ ব্যাখ্যাগুলো অনুধাবন করবেন।

কম্পিউটারের প্রসেসর কোর কী?

আমরা জানি কম্পিউটারের প্রাণ হলো এর সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সংক্ষেপে সিপিইউ। আর “কোর – Core” হলো আলাদা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট যা মেইন সিপিইউ এর অংশ হলেও আলাদা ভাবে একই কাজ করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ডুয়েল কোর চিপ। এটি দেখতে একটি একক সিপিইউ চিপ মনে হলেও এর মাঝে দুটি আলাদা ফিজিক্যাল সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট আছে। এর মানে হলো একের ভেতর দুইটি সিপিইউ। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই অতিরিক্ত সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট তাহলে কী উপকারে আসবে? প্রসেসরের একটি কোরের অতিরিক্ত যে কোরগুলো থাকবে সেগুলো মূলত মাল্টি টাস্কিং এ কাজ করে থাকে। আপনার যদি একটি সিঙ্গেল কোর পিসি থাকে এবং এটাকে যদি আপনি ডুয়েল কোরে আপগ্রেড করেন তাহলে বুঝতে পারবেন পিসি লক্ষ্যনীয় মাত্রায় দ্রুতগতির হয়ে গেছে। কীভাবে সেটা হচ্ছে চলুন ব্যাখ্যা করা যাক।

ধরুন আপনি কম্পিউটারে গান শুনছেন এবং একই সাথে ইন্টারনেট ব্রাউজ করছেন। যদি আপনার পিসিতে একটিমাত্র প্রসেসর কোর থাকে তাহলে ইন্টারনেট ব্রাউজার আনরেসপন্সিভ হয়ে যাবে। কারন মিউজিক প্লে করার জন্য যখন একটি প্রসেসর কোর ব্যবহৃত হবে তখন যদি ব্রাউজার অন থাকে তাহলে প্রসেসর কোর এর কাজ দুটি অংশে ভাগ হয়ে যাবে এবং তুলনামূলক বড় কাজটি যথেষ্ট রেসপন্স করতে পারবে না। এক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক কোর থাকলে কাজগুলো যথেষ্ট দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হবে। তবে কম্পিউটারের একাধিক কাজ করছেন কি করছেন না সেটা বড় কথা না কারন কম্পিউটারের নিজস্ব ব্যাকগ্রাউন্ড টাস্ক সব সময় প্রসেসরকে ব্যস্ত রাখে। সে ক্ষেত্রে একাধিক কোর না থাকলে কম্পিউটার কখনোই স্মুথলি কাজ করতে পারবে না। আপনারা জানেন কিনা জানিনা, গুগল ক্রোম ব্রাউজার একেকটা ওয়েব সাইটের জন্য আলাদা আলাদা কোর ব্যবহার করে। তাই কম্পিউটারের প্রসেসরের কোর কম হলে এবং গুগল ক্রোমে মাল্টিপল ট্যাব ওপেন থাকলে ব্রাউজার হ্যাং হয়ে যায়।

প্রসেসর কোর সমূহের প্রকারভেদ ও তুলনামূলক আলোচনা

কম্পিউটার কোর সমূহকে সাধারণত তাদের ফিজিক্যাল কোর এর সংখ্যা অনুযায়ী ভাগ করে নামকরণ করা হয়। যেমন কম্পিউটার প্রসেসরে যদি ২টি ফিজিক্যাল কোর থাকে তাহলে তার নাম হবে ডুয়েল কোর, যদি ৪টি থাকে তাহলে কোয়াড কোর আর যদি ৬টি থাকে তাহলে হেক্সাকোর। এমন করে যে কয়টি কোর বর্তমান বাজারে প্রচলিত আছে তাদের নাম এবং কোর সংখ্যা নিচে তুলে ধরা হলো। তবে তাদের মধ্যে কিছু কোর আন্ডার ডেভেলপমেন্ট প্রসেসে আছে।

প্রসেসর কোর এর প্রকারভেদ

  • ডুয়েল কোর – দুটি প্রসেসর ইউনিট
  • কোয়াড কোর - চারটি প্রসেসর ইউনিট
  • হেক্সা কোর - ছয়টি প্রসেসর ইউনিট
  • অক্টা কোর – আটটি প্রসেসর ইউনিট
  • ডেকা কোর – দশটি প্রসেসর ইউনিট ইত্যাদি।

প্রসেসর কোর কন্ট্রোল এবং মনিটর সিস্টেম

আপনার কম্পিউটারে কোন প্রোগ্রাম কয়টা কোর ব্যবহার করছে কিংবা কয়টা কোর সচল এবং কয়টা কোর স্থির অবস্থায় আছে সেগুলো খুব সহজেই মনিটর এবং কন্ট্রোল করতে পারবেন। আমি আগে উদাহরণ হিসাবে বলেছিলাম যে গুগল ক্রোম একাধিক কোর ব্যবহার করবে যদি একাধিক ট্যাব ওপেন রাখা হয়। আপনারা চাইলে এটা নিজেরাই প্রত্যক্ষ করতে পারেন। যাহোক, কম্পিউটার টাস্ক ম্যানেজার থেকে প্রসেস ট্যাবে ক্লিক করলে খুব সহজেই কোন প্রোগ্রাম কোন প্রসেসর কোর ব্যবহার করছে সেটা দেখা যাবে। তাছাড়াও যেকোন প্রোগ্রামের উপর মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করে অ্যাফিনিটি অপশন থেকে প্রসেসরের সবগুলো কোর দেখতে পারবেন।

এছাড়াও আপনার কম্পিউটার এর সামগ্রিক কাজের জন্য কোন কোর এবং র‍্যাম কতোটুকু পরিমাণ ব্যবহৃত হচ্ছে এটা খুব সহজেই নিচের চিত্রের মতো টাস্ক ম্যানেজারের পারফোরমেন্স মনিটর থেকে দেখে নিতে পারবেন। আপনার পিসির কোর যদি কম হয়ে থাকে উপরের চিত্রে সেট অ্যাফিনিটি অপশন থেকে কোর সংখ্যা লিমিটেড করে দিতে পারেন। তাহলে একটি প্রোগ্রাম অন্য প্রোগ্রামের পারফোরমেন্সে বাঁধা দিতে পারবে না।

Hyper-Threading Technology – কোর জগতের অসামান্য অবদান

নিচের চিত্রটি ভালো করে লক্ষ্য করুন। বলুন তো এখানে প্রসেসরের কয়টা কোর দেখা যাচ্ছে? আপনারা হয়তো চোখ বন্ধ করে উত্তর দিবেন, “আমরা কি এতোই বোকা নাকি, এখানে যে আটটি কোর আছে এটাও বলতে পারবো না ভেবেছন?”। যাহোক, চিত্রটিতে আটটি কোর আছে মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে এটি একটি কোয়াড কোর প্রসেসর? চোখ কপালে না উঠে আসমানে উঠলো নাকি? ভাবছেন আমি যা খুশি তাই আপনাদের বুঝানোর অপচেষ্টা করছি। আসলে আমি আপনাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছি না। এই অবদানটি পুরোটাই ইনটেল এর। তাদের তৈরী করা Hyper-Threading Technology প্রত্যেক ফিজিক্যাল কোরকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করে যে তারা সিস্টেমের সাথে দুইটি লজিক্যাল কোর হিসাবে কাজ করে।

এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন Hyper-Threading Technology টেকনোলজি থাকলে আমাদের কোয়াড কোর প্রসেসর দিয়েই আমরা অক্টাকোর প্রসেসর এর সমান পারফোরমেন্স। কারন এটা শুধু কোন তত্ত্ব কথা না, বাস্তবিকই কোয়াড কোর প্রসেসর Hyper-Threading Technology ব্যবহার করে অক্টাকোর এর মতো ৮ টি লজিক্যাল কোর হিসাবে কাজ করে। মোবাইল ফোর টেকনোলজিতে কোয়াড কোর আর অক্টাকোর এর মাঝে তুলনামূলক আলোচনা সম্পর্কে খুব শীঘ্রই আমার একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হবে। তখন বিষয়টা আপনারা পরিপূর্ণ ভাবে জানতে পারবেন

ক্লক স্পিড এবং কোর এর মাঝে পার্থক্য

প্রসেসর কোর এবং ক্লক স্পিড জিনিস দুইটাকে অনেকেই মাঝে মাঝে এক করে ফেলেন। আসলে তারা একই জিনিস না। প্রত্যেকটি সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট এর একটি আলাদা ক্লক স্পিড আছে। যেটা নির্ধারণ করে দেয় প্রসেসিং ইউনিটটি আসলে কতো দ্রুত কাজ করবে (যদিও এখনো পর্যন্ত এটাই প্রচলিত ধারনা তবে এই কথাটি সত্য কিনা এটা নিয়ে গবেষকদের মনে এখনো শঙ্কা আছে)। যাহোক, মনে করি, একটি ইন্টেল Core i5-3330 কোয়াড-কোর প্রসেসরের ক্লক স্পিড ৩গিগাহার্জ। এর মানে হলো প্রসেসিং ইউনিটে ৪টি ইন্টেল i5 প্রসেসর আছে যাদের প্রত্যেকটির স্পিড ৩ গিগাহার্জ করে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা।

কোর দ্বিগুন করলেই স্পিড দ্বিগুন নাও হতে পারে

অনেক কম্পিউটার প্রোগ্রাম সিঙ্গেল কোর ভিত্তিক অর্থাৎ গুগল ক্রোমের মতো তাদের কাজগুলো কোর সমূহে ভাগ করে দেয় না। এক্ষেত্রে আপনি যদি একাধিক কোরও সংযোজন করেন তাহলেও স্পিড একই রকম থাকবে। আপনার যদি 3GHz এর কোয়াড কোর প্রসেসর থাকে তাহলেও এক্ষেত্রে প্রোগ্রামটি 12GHz (3x4=12) এর পরিবর্তে 3GHz স্পিডই প্রদর্শন করবে। আর বাকি 9GHz স্পিড আইডল মোডে থাকবে। কারন প্রোগ্রামটি সিঙ্গেল কোর ভিত্তিক হওয়াতে একটা কোরের বেশি ব্যবহার করতে পারবে না। তবে বাকি কোর এবং তাদের স্পিড পরবর্তি কোন প্রোগ্রামের জন্য অপেক্ষা করবে।

অধিকাংশ প্রোগ্রামগুলো সিঙ্গেল কোর ভিত্তিক বিধায় একই প্রোগ্রাম ডুয়েল কোর আর কোয়াড কোরে চালালে একই ধরনের স্পিড পাওয়া যাবে। যেমন মাইক্রোসফট অফিস সিঙ্গেল কোর ভিত্তিক। ফলে এটি যে কম্পিউটারেই ব্যবহার করেন না কেন স্পিড একই রকম থাকবে। তবে সেসব প্রোগ্রাম মাল্টিপল কোর ভিত্তিক তারা অধিক কোরের পিসিতে অসাধারন পারফোরমেন্স দিবে। গুগল ক্রোম কেন সাধারন পিসিতে ভালোভাবে চলে না এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন?

Related Posts
Previous
« Prev Post